নাবীল অনুসূর্য

বাংলায় কথা কই

কোরবানির ইদ স্পেশাল : ছাগল পর্ব

প্রথম পোষ মানা পশুদের একটি
মানুষ প্রথম যে কয়টি প্রাণীকে পোষ মানিয়েছিল, ছাগল সেগুলোরই একটি। প্রথম ছাগল পোষ মানানোর ঘটনা ঘটেছিল সম্ভবত আজ থেকে এগার হাজার বছর আগে। এশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যে। এবং বন্য পশুদের এই পোষ মানানোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মানুষ শিকারি-সমাজ থেকে কৃষি-ভিত্তিক সমাজে প্রবেশ করে। ছাগলকে পোষ মানিয়ে মানুষের কত যে সুবিধা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে সবচেয়ে লাভ হয়েছে দুটো পানীয় পাওয়াতে। প্রথমত ছাগলের দুধ। দুধের মধ্যে ছাগলের দুধই নাকি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ খায়। গরুর দুধের চেয়ে নাকি সেটাই বেশি পুষ্টিকর। সাথে ওদের মাংস তো আছেই। শুধু তাই নয়, কফি আবিষ্কারেরও একটা বড় কৃতিত্ব ছাগলের। কতগুলো পোষা ছাগল কফি খেয়ে সারা রাত জেগে থাকত। আর তাদের এই ঘুম না আসার কারণ খুঁজতে গিয়েই আবিষ্কার হয় কফি।

নিউ ওয়ার্ল্ডে নেয়া প্রথম প্রাণী
দুই আমেরিকা মহাদেশ মিলিয়ে পৃথিবীর পশ্চিমের যে বিশাল অঞ্চল, ১৫-১৬ শতকের দিকে তাকে নিউ ওয়ার্ল্ড বলে ডাকা হতো। ১৬২০ সালে এই নিউ ওয়ার্ল্ডে বৃটেন থেকে একটা জাহাজ এসে ভিড়েছিল। নাম ছিল মেফ্লেয়ার। এই জাহাজটা বেশ বিখ্যাত। মেফ্লেয়ার এমনকি পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা কালচারাল আইকনই হয়ে দাঁড়ায়। জাহাজটাতে করে অন্তত শখানেক বৃটিশ ‘পিউরিটান’ এসেছিল আমেরিকায়। আর হ্যাঁ, সাথে করে এনেছিল অনেকগুলো ছাগল। তার প্রমাণ আছে ১৬৩০ সালের জেমসটাউনের শুমারির রিপোর্টেই। তার থেকেই অনুমান করা হয়, নিউ ওয়ার্ল্ডে, মানে আমেরিকা মহাদেশে বয়ে নিয়ে যাওয়া প্রথম প্রাণী ছাগলই বটে।

ছাগলের রকমফের
ছাগলের কিছু জাত আছে, রীতিমতো অদ্ভুত স্বভাবের। যেমন এক জাতের ছাগল আছে, চমকে গেলে বা উত্তেজিত হলে একদম অজ্ঞান হয়ে যায়। আসলে ওদের জ্ঞান ঠিকই থাকে। কিন্তু শরীরের কোনো অংশই নাড়াতে পারে না। আবার মরক্কোতে আরেক জাতের ছাগল থাকে, ওরা রীতিমতো গাছের মগডালে উঠে বসে থাকতে পারে। তবে ছাগলের জাতপাতের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, একেক ধরনের ছাগল একেকভাবে ডাকে। কেবল ডাক শুনেই ছাগলের দেশকাল বুঝে ফেলা যায়।

ছাগল কীভাবে ‘কিনা’ খায়
কথায় আছে, পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়। কথাটা নিতান্ত মিথ্যাও নয়। ছাগল এমন অনেক ঘাস-লতাপাতাও খেতে পারে, যেগুলো অন্য প্রাণীরা পারতপক্ষে এড়িয়ে যায়। তার একটা কারণ ওদের মুখের গড়ন। ওদের উপরের চোয়ালে কোনো দাঁত থাকে না। বদলে থাকে দাঁতালো একটা প্যাড। এই প্যাড অবশ্য ছাগল জাতীয় আরো অনেক প্রাণীরই থাকে। সাথে ওদের ওষ্ঠ, মানে উপরের ঠোঁটটাও খুব মজার। ওরা ইচ্ছেমতো নাড়াতে-চাড়াতে পারে। এ দুই মিলিয়ে ওরা সহজেই কাঁটাযুক্ত ডাল বা ঝোপ থেকেও খাওয়ার মতো নরম ঘাস-পাতা বেছে খেতে পারে। আবার ‘কিনা’ খাওয়ার পর তো সেসব হজম হওয়ারও ব্যাপার আছে। সে ব্যবস্থাও ওদের পেটে আছে। বলা যায়, ওদের পাকস্থলী চারটা। মানে ওদের পাকস্থলীতে চারটা অংশ আছে। সেগুলোতে চার ধাপে খাবার হজম হয়। তাই ‘কিনা’ খেলেও ওরা সেসব হজম করে ফেলতে পারে।

বিখ্যাত যত ছাগল
ছাগলের সবচেয়ে মজার বিষয় সম্ভবত এর শিং দুটো। কাজেই যে ছাগলের শিং বেশি বড়, সেই ছাগলের প্রতি মানুষের নজরও একটু বেশিই থাকে। এ বাবদে বর্তমানে পৃথিবীর সেরা ছাগলের নাম ’রাসপুতিন’। অস্ট্রিয়ার জ্লান শহরের বিখ্যাত এই ছাগলের শিংয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬ ইঞ্চি। এমনি আরেক বিখ্যাত ছাগল ‘হাপ্পি’। সে অবশ্য তার কর্ম দিয়ে বিখ্যাত, স্কেটিং করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এই ছাগল ২০১২ সালে ১১৮ ফুট পথ স্কেটিং করেছিল মাত্র ২৫ সেকেন্ডেই। একটা পার্কিং ব্যারিয়ারে বাড়ি খেয়ে পরে না গেলে বোধহয় আরো দূর যেতে পারত। পরে ওর নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও উঠেছে।

তবে দুনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ছাগল সম্ভবত ‘নানি’ এবং ‘নানকো’। ছাগল দুটো বাস করত হোয়াইট হাউজে। হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে। ওরা ছিল দেশটির বিখ্যাত রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনের ছেলে টেডের ছাগল। টেড ওদের খুব ভালো তো বাসতোই, মাঝে মাঝে ওদেরকে ঘোড়া বানিয়ে চড়েও বেড়াত।

প্রথম প্রকাশ : টুনটুনটিনটিন, দৈনিক কালের কণ্ঠ

Leave a comment