নাবীল অনুসূর্য

বাংলায় কথা কই

বাঘে-মানুষে এক বিছানায় ঘুমায়!

দুই জনের মধ্যে ভীষণ বন্ধুত্ব। একজনের নাম আব্দুল্লাহ শোলে, আরেক জনের নাম মুলান। প্রথম জনের বয়স ৩৩, পরের জনের ৬। না, বয়সের ব্যবধান ঘোচানোটা এ বন্ধুত্বের আসল মহিমা নয়। এ বন্ধুত্ব এ জন্যই অবাক করা, কারণ তাদের একজন মানুষ, আরেক জন বাঘ! তাও আবার যে সে বাঘ নয়, রীতিমতো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

হ্যাঁ, ইন্দোনেশিয়ার আব্দুল্লাহ শোলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু মুলান আসলেই একটি বাঘ। রাজকীয় হলুদের উপর কালো রঙের ডোরাকাটা শরীরের বাংলার রাজকীয় বাঘ, মানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বাঘটি নিতান্ত বাচ্চাও নয়। বয়স ৬ বছর মানে, সে এখন পূর্ণ যৌবনে। পেশীবহুল শরীরটি ভীষণ শক্তিশালী। থাবায় রীতিমতো শক্তি আছে। দেখতেও তেমনি সুন্দর আর ভয়ংকর। আর এই ভয়ংকর বাঘটাই শোলের সার্বক্ষণিক সাথী।

বাঘে-মানুষের এই অসম্ভব বন্ধুত্বের ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ার একটি গ্রামে। দিলেম নামের গ্রামটি দেশটির পূর্ব জাভা দ্বীপের মালাং অঞ্চলে অবস্থিত। সে গ্রামেই শোলে আর মুলানের বাস। মুলানের মালিক অবশ্য শোলে নিজে নয়। মুলানের মালিক ৫১ বছর বয়স্ক নোয়ের মোহাম্মাদ শোলে। মুলানের বয়স যখন মোটে ৩ মাস, তখন তাকে নিয়ে আসেন নোয়ের। আর সেই বাচ্চা বাঘটির দেখাশোনার ভার তুলে দেন আব্দুল্লাহ শোলের কাঁধে। তখন থেকেই শোলে-মুলানের বন্ধুত্ব। সেদিন থেকেই তাদের প্রত্যেকটা দিন কেটেছে একসঙ্গে। শোলে বলতে গেলে কোলে-পিঠে করেই মুলানকে বড় করেছে। পরে তাই শোলের নামই হয়ে যায় ‘টাইগার ন্যানি’। এই নামেই ওকে দিলেমের সব মানুষ চেনে।

দেখতে দেখতে এরই মাঝে কেটে গেছে প্রায় ৬ বছর। মুলান এখন শক্তিশালী পূর্ণবয়স্ক বাঘ। লেজসহ ওর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ মিটার। উচ্চতা ১ মিটার। ওজন প্রায় ২৮ স্টোন। মানে ম্যাট্রিক সিস্টেমে ১৭৮ কেজির মতো। আর তার পেটটাও কম বড় নয়। দৈনিক দুইবার করে ওর বিশাল পেটে চালান করতে হয় কেজি ছয়েক মাংস। সেগুলো কীসের মাংস, তা নিয়ে অবশ্য মুলানের তেমন খুঁতখুঁতানি নেই। মুরগির মাংস কি ছাগলের মাংস, কোনোটাতেই মুলান আপত্তি করে না। ওর মাংস পেলেই হল, গপাগপ খেয়ে নেয়। পেটে চালান দিয়ে ঢেঁকুর তোলে।

অন্য বাঘেরা যখন বনে রাজত্ব করে বেড়ায়, সে বয়সটাও মুলান পার করে দিচ্ছে শোলের সঙ্গে খেলাধুলা করেই। তাদের খেলাধুলায় আহ্লাদেরও কমতি থাকে না। দুজনের দেখা হলেই দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে। আর তারপরই মুলান তার ভয়ংকর জিভ বের করে শোলের গা-হাত-পা চেটেপুটে দেয়। বিনিময়ে শোলে মুলানের গালে এঁকে দেয় চুমু। কখনো আবার দুজনে মিলে ঘাসের বুকে গড়াগড়ি দিতে থাকে। কে বেশি গড়াগড়ি দিতে পারে, তাই নিয়েই যেন চলে পাল্লা। তাদের খেলাধুলা অবশ্য শুধু আদর সোহাগ আহ্লাদেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তারা খেলার নামে মারামারিও করে। দুজন দুজনকে আক্রমণ করার ভান করে, মারামারি করার অভিনয় করে। তারপর দুজনেই হাসিতে লুটিয়ে পরে। আবার আহ্লাদে মাতে।

অবশ্য প্রথম প্রথম মুলান ঠিক বুঝে উঠতে পারতো না, তার গায়ের শক্তি আসলে কতখানি। বুঝতে পারতো না, কতখানি শক্তি খাটালে শোলের কিছু হবে না। আর তাই একবার খেলাচ্ছলে মারামারি করতে গিয়ে শোলেকে সে বেশ গুরুতর আঘাতই করে বসে। মুলানের থাবার আঘাতে শোলের চোখের খানিকটা ক্ষতিও হয়। তাতে অবশ্য শোলে তেমন রাগ করেনি। তখনো যে মুলান বাচ্চা বাঘ। বাঘের বাচ্চা যখন, এমন তো দু-একবার হতেই পারে।

সেই দুর্ঘটনায় শোলে যে আসলেই রাগ করেনি, কিংবা সে দুর্ঘটনার ফলে ওর মধ্যে আসলেও যে কোনো ভয়-ডর ঢোকেনি, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, এখনও শোলে মাঝে মধ্যেই মুলানের সঙ্গে ঘুমায়। এই কাজটা শোলে করে আসছে মুলানের ছোটবেলা থেকেই। যেদিন ইচ্ছে করে, নিজের ঘরের সুন্দর নরম বিছানা ফেলে চলে যায় মুলানের সঙ্গে ঘুমাতে। তারপর দুজনে মিলে ভোঁস ভোঁস করে নাক ডাকতে ডাকতে ঘুমায়। মানে আমাদের যেমন প্রবাদ আছে, বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়, তেমনি ইন্দোনেশিয়ার দিলেম গ্রামে বাঘে-মানুষে এক বিছানায় ঘুমায় আরকি!

প্রথম প্রকাশ : মগজ ধোলাই, দৈনিক কালের কণ্ঠ

One comment on “বাঘে-মানুষে এক বিছানায় ঘুমায়!

  1. poshupakhi
    July 5, 2021

    বিষয়টি অন্ত্যান্ত বিচিত্রকর। বাঘ হিংস্র প্রাণীদের মধ্যে একটি। বাঘ সহ অন্যান্য প্রানিদের সম্পররেক জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

    Like

Leave a comment